এক টুকরো ভালোবাসা
এক টুকরো ভালোবাসা
মুনমুন মুখার্জ্জী
ছোট্ট তপার চিৎকারে সুমনা চমকে উঠে। বাগানে খেলতে গিয়েছিল হঠাৎ কি হল? ও ছুটে বাইরে এসে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়, আর তার নাম ধরে ডাকতে থাকে।
"তপা তপা, কোথায় তুই?"
"মা আমি বাথরুমে, তুমি এসো এক্ষুণি"
"বাথরুমে? কি হল? খোল খোল--"
দরজা খুলে তপা মাকে টেনে বাথরুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তার চোখে মুখ আতঙ্ক। কপাল থেকে রক্ত ঝড়ছে। সুমনা ভয় পেয়ে যায়।
"কি হয়েছে সোনা?"
"খেলতে গিয়ে ভাই ব্যাট এত জোরে চালালো যে আমার কপালে লাগলো। ঘরে বাবার সামনে বললে বাবা ওকে মারবে। ওর কি দোষ, লেগে গেছে, ইচ্ছে করে তো মারেনি।"
"তোকে কে বলল বাবা ওকে মারবে? খেলতে গিয়ে লাগতেই পারে--"
"বকবে না তো?"
"না রে মা, বকবে না।"
"ঠিক আছে, তবে ঘরে চলো।"
"একটু বস, আগে রক্ত বন্ধ করতে হবে।"
সুমনা মেয়েকে বাথরুমে রেখেই বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে পাশের বাড়ির দেওর রাজা এসেছে।
"বৌদি তপু কেমন আছে? ওর কি খুব জোর লেগেছে?"
সুমনার স্বামী জহর বলে, "ভেতরে কি করছ? মেয়েকে বাইরে নিয়ে এসো।"
"রক্ত ঝড়ছে, ও খুব ভয় পেয়েছে। এর উপর তোমাদের উত্তর দিতে গেলে ও ঘাবড়ে যাবে। দশ মিনিট দাও।"
দু'কথা বলার পর সুমনাকে বাগান থেকে দূর্বাঘাস তুলে নিয়ে আসতে দেখে জহর বলে, "টোটকা ওষুধ দেওয়ার কি দরকার? ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেই তো হল। রাজাকে সাথে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি।"
"হুম, সে তো যেতেই হবে, একটু সময় নিচ্ছি ওর ভয় কাটানোর জন্য। রক্ত বন্ধ হলে নিয়ে যেও।"
বেশি কথা না বাড়িয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় সুমনা। ঘাসগুলো ভালো করে হাতে ডলে তপার কপালে চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পর কোলে করে বাইরে নিয়ে আসে।
জহর কোলে নিতে হাত বাড়ালে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে দেয়। সুমনা নাটক করে জহরকে শুধায় "তুমি কি তপুর ভাইকে মারবে?"
"মারব কেন? খেলতে খেলতে লেগে যায় তো, আমাদের ছোটবেলায় কত লেগেছে বল রাজা?*
"একদম, এখন চলো ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসি, তাহলে ব্যাথা একেবারে ছুমন্ত্র হয়ে যাবে।" রাজা বলে।
"ভাইকে বকবে না? তাহলে চলো"-- বলে তপা জহরের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। "আই লাভ ইউ বাবা"--
"দেখো কাণ্ড, সব ঝকমারি আমি সহ্য করি আর কেউ একটু ভালোও বাসে না।"
তপা বাবার কোল থেকে মাকে টেনে গালে চুমু খায়।
সবাই হাসতে হাসতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন